নিরপেক্ষতায় এগিয়ে আমরা...

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৪

সাগরে প্রচুর ইলিশ, নদ–নদী খালি

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর ৫ সেপ্টেম্বর,২০২০

ইলিশের প্রচলিত ভরা মৌসুম জুন থেকে আগস্ট। কিন্তু আগস্টের শেষ পর্যন্তও সাগর ও নদ–নদীতে জাতীয় এই মাছ যেন সোনার হরিণ। সেপ্টেম্বরে এসে সাগরে ঝিলিক দিচ্ছে রুপালি আঁশ। তাতেও খুশি হতে পারছেন না জেলেরা। তাঁরা আঙুলের কর গুনে দেখছেন, অক্টোবরের নিষেধাজ্ঞা শুরুর কদিন বাকি।

সাগরের জেলেরা তবু সপ্তাহ তিনেক ইলিশ পাচ্ছেন। নদ-নদীর জেলেদের মুখ শুকিয়ে আছে। দিনরাত নদীতে জাল ঠেলেও ইলিশ ওঠে না। এবার নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে নদ-নদীতে ইলিশ মিলবে—এমন আশার বাণীও নেই।

ইলিশ বিশেষজ্ঞ, জেলে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মে-জুন মাসে সাগরে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা আসে অক্টোবরে। দুই নিষেধাজ্ঞার মধ্যবর্তী সময়টা ইলিশের ভরা মৌসুম। এই সময়ে সাগর ও নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে; আবার আকৃতিও বড়। কিন্তু এখন ইলিশের ভরা মৌসুমে পরিবর্তন খুব স্পষ্ট। ইলিশের প্রজনন ও বিচরণের সঙ্গে বৃষ্টির সম্পর্ক রয়েছে। বৃষ্টির মৌসুমে হেরফের হওয়ায় ইলিশের ভরা মৌসুমও সরে এসেছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। মে-জুনের ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর জুলাইয়ের শেষে ও আগস্টের শুরুতে টুকটাক ইলিশ পেয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের জেলেরা। কিন্তু ৪ আগস্টের পর বঙ্গোপসাগরসহ এ অঞ্চলের নদ–নদীতে ইলিশের আকাল শুরু হয়।

বরগুনা ট্রলার ও মৎস্য সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এখন আবহাওয়া ও ইলিশের মতিগতি বোঝা মুশকিল। ইলিশের ভরা মৌসুম পিছিয়ে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞার সময়ও পেছানোর দাবি জানান তিনি। আর অন্তত ভরা মৌসুমে ইলিশ রপ্তানির দাবি তাঁর। সাগরের জেলেদের উভয়সংকট

বুধবার থেকে বরগুনার পাথরঘাটা, পটুয়াখালীর মহিপুর ও বরিশালের পাইকারি বাজারে ইলিশের পরিমাণ বাড়তে শুরু করেছে। তবু জেলে, আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের হতাশা কাটেনি। কারণ, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই শুরু হবে প্রজনন মৌসুমের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। তা শেষ হতে হতে ইলিশের মৌসুমও শেষ। তাই চলতি সেপ্টেম্বরই ভরসা। সেখানেও দামের বাগড়া। এখন একসঙ্গে প্রচুর মাছ ওঠায় দাম কমে গেছে।

পাথরঘাটা বন্দরে ইলিশ মৌসুমকে কেন্দ্র করে ৫০০ কোটি টাকার ওপরে লগ্নি। কিন্তু এত দিন মাছ না পাওয়ায় সবাই হতাশ ছিলেন। এখন হঠাৎ করে মাছ ধরা পড়লেও প্রতি মণে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা দর কমে গেছে। একই অবস্থা পটুয়াখালীর মহিপুর-আলীপুর মৎস্য বন্দর এবং বরিশালের পাইকারি বাজারে।

বরিশালের পোর্টরোড আড়তদার সমিতির সভাপতি আশরাফ আলী প্রথম আলোকে বলেন, সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কম দামেই ইলিশ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন সবাই।নদ-নদীর জেলেদের পিঠ দেয়ালে

ইলিশ আহরণে ভিন্ন চেহারা নদ–নদীতে। পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের দেখা নেই এখনো। এমন পরিস্থিতিতে জেলে ও ইলিশ খাতে বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার ঠান্ডার বাজার ইলিশ অবতরণকেন্দ্রের আড়ত মালিক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ইলিশ পেতে জেলেদের অগ্রিম টাকা দিয়েছি। নদীতে মাছ নেই। জেলেরা না খেয়ে মরবেন। আমরাও দুশ্চিন্তায় আছি।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছরে শরীয়তপুরে ৫ হাজার ২৬৩ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছিল। জুলাই-আগস্টেই ১ হাজার ১৬ মেট্রিক টন ইলিশ ওঠে। এবার একই সময়ে ইলিশ উঠেছে ২৩৩ মেট্রিক টন (৭৭ শতাংশ কম)।

tags

মন্তব্য

মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন

সব খবর