সারাদেশে মাদকের গডফাদার থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত হালনাগাদ তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। র্যাব, পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে তৈরি হচ্ছে মাদক কারবারীদের এই তালিকা। ওই তালিকা ধরেই মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে নামবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর আগে শুধুমাত্র গডফাদারদের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। তবে এবার খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা আসার পর থেকে এ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত এ কাজ শেষ হবে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্টরা।
র্যাব, বিজিবি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, অতি গোপনীয়তার সঙ্গে বিভিন্ন বাহিনী মাদক কারবারিদের তালিকা করে থাকে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জেলা শহর পর্যন্ত বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে এ তালিকা করা হয়। পরে সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধান দপ্তরের গোপনীয় শাখার মাধ্যমে তালিকাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হয়। এরপর একাধিক মন্ত্রণালয় ও মাদকবিরোধী টাস্কফোর্সের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠকে বিভিন্ন তালিকা সমন্বয় করে একটি চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হয়।
কর্মকর্তারা জানান, যেসব মাদক কারবারির নাম ছয়টি সংস্থার তালিকাতেই পাওয়া যায় তাদের ‘এ’ ক্যাটাগরির মাদক কারবারি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘শীর্ষ মাদক কারবারি’ হিসেবে বিবেচিত হয়। যাদের নাম অন্তত পাঁচটিতে থাকে তাদের ‘বি’ ক্যাটাগরি, চার সংস্থার তালিকায় একই নাম পাওয়া গেলে তাকে ‘সি’ ক্যাটাগরিভুক্ত করা হয়। একইভাবে মাদক কারবারীরা ‘ডি’, ‘ই’ এবং ‘এফ’ ক্যাটাগরিভুক্ত হয়।
সম্প্রতি কয়েকটি রেঞ্জে ও মহানগর পুলিশের কমিশনার রদবদল করা হয়। রদবদলের পর যোগ দেওয়া সব কর্মকর্তা মাদকের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দেন। একই সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের হালনাগাদ করার তথ্য জানান।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, পুরো রেঞ্জের মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা হালনাগদ করা হচ্ছে। এ রেঞ্জের কক্সবাজারকে টার্গেট করে এখানকার সব পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়। নতুন তালিকা তৈরির পর নতুন এই পুলিশ সদস্যরা মাদকের ব্যাপারে সাঁড়াশি অভিযানে নামবে বলেও তিনি ঘোষণা দেন।
ডিআইজি আবদুল বাতেন রাজশাহী রেঞ্জে যোগ দেওয়ার পরপরই তিনি এ ব্যাপারে কড়া হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা বড় অভিযানে যাচ্ছি। নতুন করে মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা হচ্ছে। তালিকা হাতে আসার পর এ অভিযান হবে বলে তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকও একই হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, মাদকমুক্ত করতে যা করা প্রয়োজন তাই করা হবে। নতুন তালিকা ধরে সাঁড়াশি অভিযান হবে।
গাজিপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির যোগদানের পরপরই মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানান। কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। নতুন তালিকা তৈরি হচ্ছে। সাঁড়াশি অভিযানের জন্য প্রস্তুত হন।
সূত্র জানায়, বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদের মাদকের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানের কথাই মূলত মাঠ পর্যায়ের নতুন কর্মকর্তারা ব্যক্ত করেছেন। তালিকা শেষের পর খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে সাঁড়াশি অভিযান হবে। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) নজরুল ইসলাম শিকদার বলেন, ‘মাদক কারবারীদের তালিকা হালনাগাদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এসংক্রান্ত একটি চিঠি হাতে পেয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ মাদকবিরোধী টাস্কফোর্স সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকেই তালিকা হালনাগাদের তাগিদ দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
টাস্কফোর্সের কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি এক বৈঠকে সারাদেশে মাদক কারবারীদের তালিকা হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই নতুন তালিকা তৈরিতে হাত দেয় বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ আরো দুটি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা।
এ বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘মাদক কারবারীদের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কাজ করছি। তালিকার কাজটি গোপনীয় হওয়ায় এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া ঠিক হবে না।’
র্যাব, বিজিবি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, অতি গোপনীয়তার সঙ্গে বিভিন্ন বাহিনী মাদক কারবারীদের তালিকা করে থাকে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জেলা শহর পর্যন্ত বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে এ তালিকা করা হয়। পরে সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধান দপ্তরের গোপনীয় শাখার মাধ্যমে তালিকাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হয়। এরপর একাধিক মন্ত্রণালয় ও মাদকবিরোধী টাস্কফোর্সের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠকে বিভিন্ন তালিকা সমন্বয় করে একটি চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হয়।
এর আগে গডফাদারদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। তাতে দেশে ৮৯১ জন মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারে ২০০, চট্টগ্রামে ৮০, ঢাকায় ১০০-১৫০, রাজশাহীতে ২০, সিলেটে ১০, খুলনায় ২০, কুমিল্লায় ১০, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১০, যশোরে ১৫-২০ এবং বরিশালে ৫-৬ জন মাদক কারবারীর নাম আছে।
অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ওই সময় জেলাভিত্তিক ‘শীর্ষ ১০’ জনের নাম দেওয়ার নির্দেশনা থাকায় মাদক কারবারীর সংখ্যা কম হয়েছিল। তবে এবার খুচরা থেকে ‘গডফাদার’ পর্যন্ত সবার নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এতে হালনাগাদ তালিকায় ছয় হাজারেরও বেশি কারবারীর নাম পাওয়া গেছে। এছাড়া একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রায় আট হাজার জনের তালিকা দিয়েছে। বিজিবির তালিকায় আছে ৭৫০ কারবারীর নাম।