বাল্যবিয়ে বেড়েছে
করোনার কালবেলায়ও থামেনি নারীর প্রতি সহিংসতা, ক্ষেত্রবিশেষে বেড়েছে—নির্যাতন-সমীক্ষা চালিয়ে সম্প্রতি এমন তথ্য জানিয়েছিল মহিলা পরিষদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ব্র্যাকসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে ভিন্ন কথা। তাদের ভাষ্য, করোনাকালে বাল্যবিয়ে বাড়লেও নারী নির্যাতন বাড়েনি। সংসদীয় কমিটিকে এমন তথ্যই দিয়েছে ওই মন্ত্রণালয়। তবে ঘটনা যা-ই হোক, বাল্যবিয়ে রোধসহ নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবার নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। কমিটির এ বক্তব্যে একমত নারী অধিকার নিয়ে কর্মরত সংগঠনের নেতারা।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে করোনাকালে বাল্যবিয়ে এবং নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যপত্রে বলা হয়, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী কুড়িগ্রাম, নাটোর, যশোর, কুষ্টিয়া, নরসিংদী ও ঝালকাঠি জেলায় বাল্যবিয়ে বেড়েছে। তবে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বাড়েনি।
বাল্যবিয়ে এবং নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনগণকে সচেতন করতে ন্যাশনাল হেল্প সেন্টার (টোল ফ্রি ১০৯ নম্বর) সম্পর্কে গণমাধ্যমে নানাভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। চিকিত্সা মনোবিজ্ঞানীদের মাধ্যমে অনলাইন টেলিকাউন্সেলিং পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিষ্ঠিত ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার এবং জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিষ্ঠিত ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেলের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুকে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হচ্ছে।
সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপিত মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনাকালের প্রথম তিন মাসে (মার্চ থেকে জুন) ২৬৬টি বাল্যবিয়ে ঠেকানো হয়েছে। তবে এই সময়ে সারা দেশে ২৩১টি বাল্যবিয়ে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৭১টি বাল্যবিয়ে হয়েছে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাটোর জেলায়, ২৩টি। ১৫টি করে বাল্যবিয়ে হয়েছে যশোর ও কুষ্টিয়ায়। এ ছাড়া ঝালকাঠিতে ১০টি, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নরসিংদীতে আটটি করে, গাইবান্ধা ও কক্সবাজারে সাতটি করে, নীলফমারী ও লক্ষ্মীপুরে ছয়টি করে এবং চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে পাঁচটি করে বাল্যবিয়ে হয়েছে।
জানতে চাইলে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ কালের কণ্ঠকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রতিবেদন নিয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে নারী নির্যাতন না বাড়লেও বাল্যবিয়ে কিছুটা বেড়েছে। এর পক্ষে যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যাও রয়েছে। তবে কমিটির পক্ষ থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ এবং বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো সক্রিয় হতে বলা হয়েছে।
সংসদীয় কমিটির সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে মেরী স্টোপসের স্ট্রেনদেনিং ফ্যামিলি প্ল্যানিং সার্ভিস থ্রু অ্যাডভোকেসি ইনিশিয়েটিভের ফোকাল পারসন মন্জুন নাহার বলেন, করোনাকালে বাল্যবিয়ের পাশাপাশি নারী নির্যাতন ও অনিরাপদ গর্ভপাত বেড়েছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একই ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়ার মত দেন তিনি।
অভিন্ন মত দেন সমাজকল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থার (স্কাস) চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমাও। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘করোনাকালে ঘরবন্দি থাকার কারণে নারীর প্রতিদিনের কাজের ধরন পরিবর্তনের সঙ্গে কাজও বেড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কিশোরীরা গৃহবন্দি হয়েছে। কর্মসংস্থান সংকটে পারিবারিক অস্থিরতা বেড়েছে। ফলে নির্যাতন ও বাল্যবিয়ে বেড়েছে।