ফেলানী হত্যার ১০ বছর আজ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বিএসএফের হাতে নাগেশ্বরীর কিশোরী ফেলানী হত্যার ১০ বছর আজ। পরিবারটি আজও কাঙ্ক্ষিত বিচার পায়নি। বিচারের আশায় এখনো দিন গুনছেন তারা। আজ বৃহস্পতিবার পারিবারিকভাবে পালন করা হচ্ছে তার দশম মৃত্যুবার্ষিকী। আয়োজন করা হয়েছে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের।
এদিকে গত কয়েক বছরের মতো এবারও ঢাকায় এক দিনের কর্মসূচি পালন করছে নাগরিক পরিষদ। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংগঠনটি গণজমায়েত করবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন। তিনি জানান, এই জমায়েতের মাধ্যমে তারা ৭ জানুয়ারি বিশ্বব্যাপী ফেলানী দিবস পালন, ফেলানীর হত্যাকারী বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের ফাঁসি, ফেলানীর পরিবারসহ সীমান্ত আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্ত সব ব্যক্তি ও তাদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান, কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তের নাম ফেলানী সীমান্ত নামকরণ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন পার্ক রোড অথবা কূটনৈতিক এলাকায় একটি রাস্তার নাম ফেলানী সরণি, সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন বন্ধের দাবি জানাবেন।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর তারা চিঠি লিখেছিলেন। এছাড়া ফেলানী দিবস পালনের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর ২০১৫ সালে তারা একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, এটি বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের সদস্য যে কোনো রাষ্ট্রকে প্রস্তাব আনতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে ৯৪৭ নম্বর আন্তর্জাতিক ৩ নম্বর সাব পিলারের পাশ দিয়ে মই বেয়ে কাঁটাতার ডিঙিয়ে বাবার সঙ্গে দেশে ফিরছিল ফেলানী। এ সময় টহলরত চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ তাকে গুলি করে হত্যা করে। তার বাড়ী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী গ্রামে। ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট কোচবিহার জেলার বিএসএফের ১৮১ সদর দপ্তরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়। ৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে। রায় প্রত্যাখ্যান করে ১১ সেপ্টেম্বর ফেলানীর বাবা ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে সেদেশের সরকারকে ন্যায়বিচারের আশায় চিঠি দেন।
২০১৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ফেলানী হত্যার ঘটনায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম প্রথম ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপ্রদান অ্যাডভোকেট সালমা আলী দ্বিতীয় বাদী হয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা করেন। ভারতের সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ফৌজদারি মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় ভারতের আইন ও বিচারবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিএসএফের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়। ২০১৫ সালের ২১ জুলাই ফেলানীর বাবার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ চেয়ে আরো একটি আবেদন করা হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপ্রধান মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সালমা আলী মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পরিবারের ক্ষতিপূরণসহ স্বচ্ছ বিচার না পাওয়ায় ঐ মামলার একজন বাদী হিসেবে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আশা করছি আমরা কাঙ্ক্ষিত বিচার পাব।’
পরে ২০১৫ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ আরো একটি ক্ষতিপূরণ মামলা করে। ঐ বছরের ৩১ আগস্ট ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সেদেশের সরকারকে ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ লাখ রুপি প্রদানের অনুরোধ করে। এর জবাবে সেদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামকে দায়ী করে বক্তব্য দেয়।
ফেলানী হত্যা মামলা পরিচালনায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সদস্য মানবাধিকারকর্মী, কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘করোনায় ভার্চুয়ালি চলছে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রম। তাই ফেলানী হত্যা মামলার শুনানি হচ্ছে না। আমরা চাই ভার্চুয়ালি শুনানি হলেও দুই দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি হলে তা উভয় রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক।’
৬ জানুয়ারি বাবা নূরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ বহু জনের কাছে গিয়েছি; কিন্তু ১০ বছরেও কাঙ্ক্ষিত বিচার পেলাম না।’