নৌকার বইঠা ধরতে চান ২০ নেতা
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) শূন্য আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে মাঠে সরব রয়েছেন কমপক্ষে ২০ আওয়ামী লীগ নেতা। এখনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা শোকসভা, মিলাদ মাহফিল, ইফতার পার্টি, সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ নানা আয়োজনে প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও। সব মিলিয়ে মতিন খসরুর মৃত্যুর দুই সপ্তাহ না পেরোতেই এ আসনে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছে।
গত ১৪ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান কুমিল্লা-৫ আসনের পাঁচবারের সংসদ সদস্য (এমপি) আবদুল মতিন খসরু। গত ২২ এপ্রিল তাঁর আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী আসন শূন্য ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে সেখানে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এরই মধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে মনোনয়নপ্রত্যাশী কমপক্ষে ২০ আওয়ামী লীগ নেতার নাম।
এ ছাড়া উপনির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছা পোষণ করছেন বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন নেতা। যদিও বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না—তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলটির কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
গেল কয়েক দিন বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া ঘুরে এবং নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, মতিন খসরুর স্ত্রী সেলিনা সোবহান খসরু, ছেলে মুনেফ ওয়াসিফ, ভাই আবদুল মমিন ফেরদৌস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু সালেহ মোহাম্মদ সেলিম রেজা সৌরভ, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খান, ঔষধ প্রশাসনের সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বুড়িচং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য আবদুস সালাম বেগ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক এহতেশামুল হাসান ভূঁইয়া রুমী, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী, ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আল-আমীন, ব্রাহ্মণপাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারী, ডিএলএম গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ মতিন, আওয়ামী লীগ নেতা মাহতাব হোসেন, ব্রাহ্মণপাড়া আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহজালাল মোল্লা, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মানিক, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার জিয়াউল হাসান মাহমুদ, সাবেক ছাত্রনেতা আবদুল জলিলসহ আরো বেশ কয়েকজন নেতা।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় মতিন খসরুর শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। তিনি মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলেন। আমি দীর্ঘদিন তাঁর সঙ্গে রাজনীতি করেছি। নির্বাচনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন দেন আমি নির্বাচনে অংশ নেব।’
মতিন খসরুর ভাই অ্যাডভোকেট আবদুল মমিন ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা এখনো শোকাহত। উপনির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে পারিবারিকভাবে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে আমার ভাতিজা মুনেফ ওয়াসিফ নির্বাচন করুক। সে যদি প্রার্থী না হয়, তখন আমি দলীয় মনোনয়ন চাইব।’
ব্রাহ্মণপাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী বলেন, ‘খসরু ভাইয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছি। তাঁর সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পাশে ছিলাম। দল যদি মনোনয়ন দেয় আমি নির্বাচনে অংশ নেব।’
এদিকে মতিন খসরুর মৃত্যুর পরপরই আওয়ামী লীগের এত নেতার প্রচারণায় নামার বিষয়টি অনেকের চোখেই লাগছে। এ নিয়ে চলছে মুখরোচক আলোচনাও। তবে আওয়ামী লীগ মাঠে সরগরম থাকলেও অনেকটাই চুপচাপ বিএনপি-জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল। নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় প্রচারণা থেকে বিরত দলটির নেতাকর্মীরা।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাবেক সহসভাপতি এ এস এম আলাউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘মতিন খসরু জনদরদি নেতা ছিলেন। এই আসন থেকে দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। তাঁর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনে উপনির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে দলীয়ভাবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। কিন্তু আমি চাই এ আসনে একজন যোগ্য ব্যক্তি এমপি নির্বাচিত হোক।’