ধর্ষণ ইচ্ছার উৎস বন্ধ করুন
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ব্যাপক হারে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় অনেক মানুষকে
দেশে শরিয়া আইন কার্যকর করার জন্য দাবি জানাতে দেখছি। ব্যাপারটি আমার কাছে
যথাযথ বুদ্ধিদীপ্ত বলে মনে হয়নি। এই দাবির আগে আমাদের আরো কিছু পদক্ষেপ
নিতে হবে। কারণ : যেসব কারণে একজন মানুষ ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়
সেই কারণ বন্ধ না করে কিছু ধর্ষকের শাস্তি কার্যকর করলেই ধর্ষণ বন্ধ হবে
না। প্রথমেই যে কারণগুলোতে মানুষের ধর্ষণ মনোবৃত্তি সৃষ্টি হয় সেগুলো বন্ধ
করতে হবে।
ইসলাম আপরাধ ধমনের জন্য শুধু আইন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। শুধু
আইন দ্বারা মানুষকে সংশোধন করা যায় না। ইসলাম আইন প্রণয়নের আগে মানুষের
মন-মানসিকতায় তাকওয়া তথা খোদাভীতি সৃষ্টি করার ব্যবস্থা করেছে। এ কারণেই আল
কুরআনের একবারে শুরুতেই তাকওয়ার কথা বলা হয়েছে। আল কুরআনও মুত্তাকিদেরকেই
হেদায়াত করে বলে জানানো হয়েছে। কারণ যাদের মনে আল্লাহর ভয় থাকে, পরকালে
আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস থাকে, তারা এমনিতেই আল্লাহর
কাছে জবাবদিহির ভয়ে অপরাধ থেকে নিজেকে বিরত রাখে। ইউসুফ আ: যেমন আজীজের
স্ত্রীর আহ্বান থেকে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে জেলে গিয়েছিলেন আল্লাহর অনুগত এবং
আল্লাহভীতি সম্পন্ন ব্যক্তিরাও প্রয়োজনে তাই করবে।
ইসলাম এটাও জানে যে,
দেশের সব মানুষের মাঝে পরকালে জবাবদিহিতার ভয় সমানভাবে থাকে না। থাকলেও
কখনো কখনো শয়তানের প্ররোচনায় মানুষের পদস্খলন ঘটে, আর এ জন্য ইসলাম আপরাধ
ধমনের জন্য কঠোর আইন ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। কারণ যারা
আল্লাহর ভয়ে অপরাধ থেকে বিরত থাকবে না তারা যেন আইনের ভয়ে অপরাধ থেকে বিরত
থাকে। রাসূল সা: ইসলামের সেই কঠোর আইনব্যবস্থাকে কঠোরভাবেই প্রয়োগ
করেছিলেন। কারণ আইন থাকলেই হয় না, সেই আইনের কঠোর বাস্তবায়নও আবশ্যক।
ওরোয়া
ইবনে জোবাইর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সা:-এর যুগে মক্কা বিজয়ের সময়
একটি মেয়ে চুরি করল। তখন তার পরিবারের লোকেরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উসামা ইবনে
জাইদের কাছে রাসূলের সুপারিশ কামনা করার জন্য গেলেন। ওরোয়া বলেন, যখন এ
ব্যাপারে উসামা রা: রাসূল সা:-এর সাথে কথা বললেন তখন রাসূল সা:-এর মুখমণ্ডল
রক্তবর্ণ ধারণ করল। তারপর তিনি রেগে বললেন, ‘তুমি আমার সাথে আল্লাহর একটি
হদ বিধান বাস্তবায়ন না করার জন্য কথা বলছ? তখন উসামা রা: বললেন, ‘হে
আল্লাহর রাসূল আপনি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ যখন বিকাল হলো তখন
রাসূল সা: খুতবাদানের জন্য দাঁড়ালেন। দাঁড়িয়ে আল্লাহ যেরূপ প্রশংসার উপযোগী
সেরূপ প্রশংসা করলেন। তারপর বললেন, অতঃপর তোমাদের আগের লোকেরা ধ্বংস হয়েছে
এ কারণে যে, তাদের মাঝে কোনো সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করলে তাকে ছেড়ে দেয়া
হতো। আর যখন কোনো দুর্বল লোক চুরি করত তখন তার ওপর হদের শাস্তি আরোপ করা
হতো। যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তার নামে শপথ করে বলছি, মুহাম্মদের মেয়ে
ফাতিমাও যদি চুরি করত তার হাতও আমি কেটে দিতাম। তারপর রাসূল সা: ওই মেয়েটির
হাত কেটে দেয়ার জন্য আদেশ করলেন। ফলে তার হাত কেটে দেয়া হলো। এরপর মেয়েটি
খুব ভালো করে তাওবা করল। তারপর বিয়ে করল। আয়শা রা: বলেন, ‘সে আমার কাছে
আসত। আমি রাসূল সা:-এর কাছে তার প্রয়োজনের কথা বলতাম।’ (বুখারি : ৪৩০৪)
সুতরাং
শুধু আইন করলেই ধর্ষণ বন্ধ হবে বলে আমি মনে করি না। যদি আমরা ধর্ষণ বন্ধ
করতে চাই তাহলে আমাদের সামগ্রিক ব্যবস্থা পরিবর্তন করে অপরাধপ্রবণতাবিরোধী
একটি সমাজব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন
আনতে হবে। সেকুলার শিক্ষাব্যবস্থা বহাল রেখে ধর্ষণ বন্ধ করার কল্পনা অলীক
কল্পনা বলেই মনে হয়। আমাদের তারবিয়ত ব্যবস্থাও খোদাভীতিসম্পন্ন তারবিয়ত
ব্যবস্থা হতে হবে। শুধু তাই নয়, আগে শাসক অভিভাবকদের নিজেদের
খোদাভীতিসম্পন্ন মানুষে পরিণত করতে হবে। সিনেমা, নাটক, বিজ্ঞাপন, বই,
পুস্তক ও ইন্টারনেটসহ সব স্থানে যৌনতা থাকবে, বিয়ে কঠিন হবে, আর কিছু
ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড দিলেই ধর্ষণ বন্ধ হবে এ ধারণা নিছক শিশুসুলভ বলেই মনে
হয়। অতএব আসুন ধর্ষণসহ সব রকমের অপরাধ দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য আগে ইসলামী
সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সাথে ইসলামী আইনব্যবস্থা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের
দাবি জানাই।