জালালুদ্দিন রুমির শহর কোনিয়া
তুরস্কের দক্ষিণ আনাতোলিয়ার মধ্যভাগে অবস্থিত চমৎকার এক নগরী কোনিয়া। এটিকে তুর্কি জাতির উত্থানের সূতিকাগার বিবেচনা করা হয়। একাধিক সভ্যতার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রাজধানী ও কেন্দ্র ছিল এই নগরী। সেলজুকদের রাজধানী থাকাকালীন শহরটি গৌরবময়কাল অতিবাহিত করে। পরে একসময় তা মোঙ্গলদের দখলে চলে যায়। প্রখ্যাত সুফি সাধক মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি (রহ.)-এর চিন্তা দর্শন ও আধ্যাত্মিকতায় কোনিয়া বিশেষভাবে প্রভাবিত। তাঁর ভক্তদের একটি দল যারা ‘মৌলভি দরবেশ’ নামে পরিচিত কোনিয়াকে ইসলামী আধ্যাত্মিকতার নগরী হিসেবে গড়ে তোলেন। বর্তমানে কোনিয়া তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ বড় ও নান্দনিক একটি শহর। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব সাত হাজার বছর আগে এ নগরীর গোড়াপত্তন।
মাওলানা জাদুঘর : জাদুঘরটি ১৯২৭ সালে বিখ্যাত সুফি ও দার্শনিক মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি (রহ.)-এর সমাধিকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়। তবে এর আগে ১২৭৪ সালে সেলজুক আমির সুলেমান ব্রাউনাহ-এর স্ত্রী গুরজু খাতুন ও আমির ইলমুদ্দিন কায়সারের অর্থায়নে মাওলানা রুমির সমাধিসৌধ নির্মাণ করা হয়। ১৮৫৪ সালে এটিকে জাদুঘরে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং ১৯২৭ সালে তা পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে রূপ নেয়। জাদুঘরের মূল কেন্দ্রে রয়েছে মাওলানা রুমি (রহ.)-এর খানকা। খানকায় গম্বুজাকৃতির একটি ছাদ। গম্বুজের নিচে এক কোণে সমাধির অবস্থান। যা সোনা ও সোনালি রঙের মখমল কাপড় দ্বারা আবৃত। এর পেছনে রয়েছে প্রশস্ত একটি কক্ষ। এ ছাড়া মাওলানা রুমি (রহ.)-এর কিছু স্মৃতি স্মারকও আছে। যেমন, তাঁর ব্যবহৃত মোচাকার টুপি, নামাজের পাটি, একাধিক পোশাক ও প্রাচীন কয়েকটি বাদ্যযন্ত্র।
আলাউদ্দিন মসজিদ : ব্যতিক্রমী নকশার মসজিদটি ১১১৬ খ্রিস্টাব্দে সেলজুক সুলতান প্রথম মাসউদের নির্দেশে নির্মাণ করা হয়। ১২৩৭ সালে পরিবর্ধন করেন সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ। মসজিদের আঙিনায় একাধিক সুলতানের সমাধি থাকায় বিপুলসংখ্যক পর্যকট মসজিদ পরিদর্শনে আসে। মসজিদের উচ্চতা ৭১ মিটার এবং প্রস্থ ৫৬ মিটার। প্রাচীরগুলো দামি কাঠে সজ্জিত।
কারাতাঈ মাদরাসা-জাদুঘর : ১২৫১ খ্রিস্টাব্দে জালালুদ্দিন কারাতাঈ নামের এক সেলজুক যুবরাজের উদ্যেগে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশজুড়ে এ মাদরাসার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এখন তা জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রাচীন যুগের বহু ইসলামী প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সমাহার ঘটেছে এখানে।
সুলাইমানিয়া মসজিদ : মসজিদটি ১৫৫৬ থেকে ১৫৭৪ সালের মধ্যে সুলতান দ্বিতীয় সেলিম নির্মাণ করেন। মসজিদে মাওলানার সম্মুখভাগে এর অবস্থান। প্রাচীন ইসলামী সভ্যতা-সংস্কৃতির বহু নিদর্শনসংবলিত মসজিদটিও দর্শনার্থীদের কাছে বেশ প্রিয়।
কোনিয়া জাদুঘর : কোনিয়ার এ জাদুঘরকে বিশ্বের কয়েকটি ঐতিহাসিক প্রাচীন সংগ্রহশালার একটি বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন ভাস্কর্য, মৃিশল্প, সুলতানদের অলংকারাদি এবং প্রাচীন যুগের নানা সভ্যতার অসংখ্য চিত্তাকর্ষক শিল্পসামগ্রী জাদুঘরের মূল আকর্ষণ।
আদালত পার্ক : কোনিয়া নগরীর অন্যতম মনোরম জায়গা এটি। সবুজ পত্র-পল্লব বেষ্টিত এ পার্কে অন্তত ১৯২ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। ১০ লাখ দুই হাজার বর্গ মিটারের বৃহদাকার এ পার্ক শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য খুবই উপযোগী। সুস্বাদু খাবার এবং নির্মল বায়ুর স্বাদ নিতে মানুষ সারা বছরই এখানে ভিড় করে।
সূত্র : তুর্কি প্রেস।