ঘরোয়া ক্রিকেটে খুশির দোলা
ক্রীড়া প্রতিবেদক : দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষ কী করতে পারে, তা চট্টগ্রামের স্থানীয় কিছু কোচকে দেখেই ঢের বুঝেছেন আফতাব আহমেদ। বর্তমানে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) দল লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের কোচ বাংলাদেশ দলের সাবেক এই ব্যাটসম্যান বলছিলেন, ‘লকডাউনের সময় তামিম কিছু টাকা পাঠিয়েছিল কোচদের জন্য। একেকজনের জন্য পাঁচ-ছয় হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। তখন অসহায় মানুষের লজ্জার আবরণটাও সরে যেতে দেখেছি। ওই টাকা নেওয়ার জন্য সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল।’
ক্রিকেটার শামসুর রহমানও সতীর্থ অনেকের বেদনাময় জীবন দেখে ব্যথিত, ‘সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে অনেক ক্রিকেটার। অনেকের সেই সঞ্চয়ও নেই। বাধ্য হয়ে তারা ধার-দেনা করে চলছে এই আশায় যে খেলা শুরু হলেই শোধ করে দেবে। আমি জেনেই বলছি, আরো দুই-তিন মাস খেলা না হলে ওদের জীবন চালানোই দায় হয়ে যাবে।’
আম্পায়ার মাসুদুর রহমানও তুলে ধরলেন তাঁর অনেক অভাবগ্রস্ত সহকর্মীর জীবনের নাভিশ্বাস, ‘ক্রিকেটাররা তবু এককালীন কিছু টাকা পায়। আম্পায়াররা পায় না সেটিও। এমন নয় যে তারা এর বাইরে তেমন কিছু করেও। ম্যাচ হলেই টাকা পায়। তা না হওয়ায় অনেককে যেভাবে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে দেখছি, সে কথা আর না-ই বললাম।’
এই তিন কোচ-ক্রিকেটার-আম্পায়ারের বক্তব্যই ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের বেশির ভাগের করোনাকালীন জীবনের কঠিন বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলার পক্ষে যথেষ্ট। ক্রমেই যখন হাহাকারে বুক ভারী হয়ে উঠছিল তাঁদের, তখনই ঘরোয়া ক্রিকেট শুরুর সম্ভাবনায় আশাবাদী হয়ে উঠেছেন আফতাব-শামসুর-মাসুদুররা। মাসুদুরের মনে হচ্ছে, ‘মরুভূমিতে একটু বৃষ্টি হওয়ার মতো স্বস্তিই অনুভব করছি।’
গত ১৬ মার্চ থেকে দেশে ক্রিকেট বন্ধ। ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে তবে শুধুই জাতীয় ক্রিকেটারদের। জাতীয় দলকেন্দ্রিক ভাবনায় ঘরোয়া ক্রিকেট এবং দেশের বেশির ভাগ ক্রিকেটার ছিলেন প্রশাসনের ভাবনার বাইরেই। তবে বাংলাদেশ দলের শ্রীলঙ্কা সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়াতেই আবার আলোচনায় ঘরোয়া ক্রিকেট। খোদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি ঘরোয়া আসর শুরু করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাতে তৈরি হওয়া আশার পিঠে আশঙ্কাও আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ক্রিকেটারের সে সংশয় অমূলকও নয়। কারণ শেষ পর্যন্ত যদি জাতীয় দলের শ্রীলঙ্কায় তিন টেস্টের সিরিজ খেলতে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ঘুচে যায়? বাংলাদেশ দল সফরে গেলে ঘরোয়া আসর আয়োজনে বিসিবি অতটা উৎসাহী থাকবে কি না, সেটিও তো স্পষ্ট নয় এই মুহূর্তে। আবার ঘরোয়া আসর হিসেবে ডিপিএলও আপাতত চিন্তায় নেই বিসিবির। অনেক ক্লাবকে রাজি করানোর ঝুট-ঝামেলায় না গিয়ে চার-পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করে করপোরেট লিগ আয়োজনের তুলনামূলক সহজ পথই তাদের পছন্দ। কিন্তু তা হলেও অসচ্ছল অনেক ক্রিকেটার থেকে যাবেন বিবেচনার বাইরে। এক ক্রিকেটার তাই আগের মতোই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, ‘ধরুন, করপোরেট লিগে চারটি দল। ক্রিকেটারের সংখ্যা হবে ৬০ জন। শ্রীলঙ্কায় না গেলে জাতীয় দলের ২০ আর হাই পারফরম্যান্সের ২০ জন মিলিয়েই তো ৪০ জন হয়ে যাবে। আমার মতো যারা ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেই জীবিকা নির্বাহ করে, তাদের অনেকের জায়গা তো সেখানে দেখি না।’
বৃহত্তর ভাবনা আছে আফতাবেরও, ‘শুধু আমার নিজের কথা ভাবলেই হবে না। আমি চাই খেলাটা মাঠে নামুক। এবং এর সঙ্গে জড়িত সবার জীবনে আবার সচ্ছলতা আসুক।’ শামসুরও তা-ই চান, ‘আমি চাই না জাতীয় দলের সফর বাতিল হোক। তবে এটিও চাই, দেশের আরো যারা ক্রিকেটার আছে, তারাও বাঁচুক। সে জন্য ঘরোয়া ক্রিকেট শুরুর পরিকল্পনার খবর শুনে আমি খুশি।’ সে আয়োজন স্বল্প পরিসরে হলেও অখুশি হবেন না মাসুদুর, ‘এখন শুরু হওয়াটাই জরুরি। কারণ শুরু হলেই সবাই বুঝবে যে সামনে আরো হবে।’ কিন্তু শ্রীলঙ্কা সফর নিশ্চিত হয়ে গেলে সেই শুরুর কথা কর্তাদের মাথায় থাকবে তো?