কালের সাক্ষী জগতি রেল স্টেশন
বাংলাদেশের প্রথম রেলস্টেশন কুষ্টিয়ার জগতি। লোকবল সংকট আর প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের কলকাতা থেকে প্রথমবারের মতো ট্রেন এসে থেমেছিল তৎকালীন পূর্ববঙ্গের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন জগতিতে। সেই থেকে এ দেশে ট্রেন চলাচল শুরু।
জানা যায়, ১৮৪৪ সালে আর এম স্টিফেনসন কলকাতার কাছে হাওড়া থেকে পশ্চিম বাংলার কয়লাখনিসমৃদ্ধ রানীগঞ্জ শহর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি গঠন করেন। এ কোম্পানি ১৮৫৪ সালে হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার রেললাইন চালু করে। এরপর ১৮৬২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কলকাতা থেকে রাণাঘাট পর্যন্ত রেলপথ চালু করে। এই লাইনকেই বর্ধিত করে ওই বছরের ১৫ নভেম্বর কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন শাখা উন্মোচন করা হয়। সে সময়ই প্রতিষ্ঠিত হয় পূর্ববঙ্গের প্রথম রেলস্টেশন জগতি। পরে ঢাকার সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করতে ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারি জগতি থেকে বর্তমান রাজবাড়ী জেলার পদ্মা নদীতীরবর্তী গোয়ালন্দঘাট পর্যন্ত রেললাইন চালু করা হয়। সে সময় মানুষ কলকাতা থেকে ট্রেন করে জগতি স্টেশন হয়ে গোয়ালন্দঘাটে যেতেন। সেখান থেকে স্টিমারে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে যেতেন ঢাকায়।
পাকিস্তান আমলে কুষ্টিয়া চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে আখ পরিবহনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত জগতি রেলস্টেশন। কুষ্টিয়ার আশপাশের জেলাগুলোর জন্য ট্রেনে করে আনা খাদ্যশস্যসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রীও খালাস হতো এই জগতি স্টেশনে। তবে আজ সেই জৌলুশ নেই ইতিহাসখ্যাত জগতি রেলওয়ে স্টেশনের। লোকবল সংকট আর প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে শ্রীহীন হয়ে পড়েছে স্টেশনটি। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ভবনগুলো ধ্বংস প্রায়।
সম্প্রতি সরকার ১৫ নভেম্বরকে রেল দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। আর তাই বাংলাদেশে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল জোনের উদ্যোগে নানা আয়োজনে ঐতিহাসিক জগতি স্টেশনে উদযাপন করা হয় এ দিবসটি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রেলওয়ের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক সাইদুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, জগতি স্টেশন ভবনের নির্মাণশৈলী অক্ষুণ্ন রেখে এটি পুনর্নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি এ স্টেশনটি ঘিরে একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলেও এ কর্মকর্তা জানান।
বর্তমানে জগতি স্টেশনে দুজন গেটম্যান ছাড়া আর কোনো কর্মচারী নেই। রাত নামলেই সেখানে মাদকসেবীদের আড্ডা জমে। স্থানীয়দের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। তারা এ ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। রেলস্টেশনটির ভবনগুলো সংস্কার ও প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিয়ে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতীক এই স্টেশনটিকে টিকিয়ে রাখার দাবি তাদের।