‘মাকে পেয়েছি, আমার আর কিছুই দরকার নেই’
শতবর্ষী মা। ছেলের বয়স ৮০ বছর। কিন্তু মা-ছেলের দেখা হয়নি দীর্ঘ ৭০ বছর। অবশেষে গত ২৫ সেপ্টেম্বর তাঁদের সাক্ষাৎ। এত দিন পর বুকের ধনকে কাছে পেয়ে ছেলেমানুষের মতো হু হু করে কেঁদে ফেলেছিলেন মা মঙ্গলের নেছা। সুখের সেই মুহূর্তে উপস্থিত সবার চোখে এল আনন্দাশ্রু। মা-ছেলের এই পুনর্মিলন দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
শতবর্ষী মায়ের ছেলের নাম আবদুল কুদ্দুস মুন্সী। তাঁর আসল বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শ্যামগ্রাম সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড্ডা গ্রামে। পরিবারের কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়ার পর রাজশাহীর বাগমারায় তিনি বড় হয়েছেন। সেখানেই তিনি বসবাস করছেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। ২৫ সেপ্টেম্বর মায়ের সঙ্গে ৭০ বছর পর দেখা হয় তাঁর। তিন দিন পর আবার বাগমারায় ফিরে যান। ২ নভেম্বর স্ত্রী সাজেদা বেগমকে নিয়ে আবার মায়ের কাছে এসেছেন কুদ্দুস। এবার ১০-১২ দিন মায়ের সঙ্গে থাকবেন তিনি। গত বুধবার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আশ্রাববাদ গ্রামে বোন ঝর্ণার বাড়িতে গিয়ে কুদ্দুসকে বৃদ্ধ মায়ের পাশে বসে থাকতে দেখা যায়। সেদিন কথা হয় আবদুল কুদ্দুসের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বোন-ভগ্নিপতি অসুস্থ মাকে এত দিন দেখে রেখেছে। মাকে রাজশাহী নিয়ে রাখার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু তা করলে তাঁরা দুঃখ পাবেন, ভেবে সেটা করিনি। আমি মাকে দেখতে কয়েক দিন পরপরই আসব। মাকে পেয়েছি। আমার আর কিছুই দরকার নেই। মাকে পেয়েছি মানে শ্রেষ্ঠ সম্পদ পেয়েছি।’
শতবর্ষী মা মঙ্গলের নেছা তেমন কথাবার্তা বলতে পারেন না। প্রথম আলোকে তিনি শুধু বললেন, ‘ছেলেকে পেয়ে আমি খুব খুশি।’ স্বামী কালু মুন্সীর মৃত্যুর পর মঙ্গলের নেছা পড়াশোনার জন্য ১০ বছর বয়সী ছেলে আবদুল কুদ্দুসকে রাজশাহীর বাগমারায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠান। ওই আত্মীয়ের স্ত্রীর বকা খেয়ে অভিমান করে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন কুদ্দুস। পরে তিনি থিতু হন বাগমারায়। পরে এক ব্যক্তির ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর।
আবদুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজশাহীতে সবাই জানতে চাইছে, মাকে অনেক দিন পর দেখলেন, কেমন লাগল। এলাকার মানুষ কেমন। আমি তাদের বলেছি, ৭০ বছর পর মাকে ফিরে পেয়েছি। আমি আনন্দিত। অনেক খুশি।’
‘আমার বিশ্বাস ছিল যে আমার মা বেঁচে আছে। মাকে দেখার জন্যই আল্লাহ হয়তো আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন কুদ্দুস।