নিরপেক্ষতায় এগিয়ে আমরা...

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৪

মিতু হত্যার জট খুলতে গিয়ে একের পর এক রহস্য উন্মোচন!

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর ২৫ অক্টোবর,২০২১

সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার জট খুলতে গিয়ে একের পর এক রহস্য উন্মোচন করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলার বাদী থেকে আসামি হয়ে কারাগারে গেছেন বাবুল। সর্বশেষ আসামি এহতেশামুল হক ওরফে ভোলার জবানিতে প্রকাশ পেয়েছে, মুছাকে হত্যার ভয় দেখিয়ে স্ত্রী হত্যায় বাধ্য করেছেন বাবুল। ওই হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র কিনতে টাকাও দিয়েছিলেন বাবুল।

এর আগে বাবুলের দাম্পত্য কলহ, পরকীয়া প্রেমসহ নানা তথ্যই প্রকাশ পেয়েছে। এসবের সঙ্গে নতুন যুক্ত হয়েছে বাবুলের পরিকল্পনা এবং অস্ত্রের জন্য টাকা দেওয়ার বিষয়টি। অনেক কিছু প্রকাশ পেলেও ধরা যাচ্ছে না হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া মুছা সিকদারকে, যিনি বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে পরিচিত। সেই মুছা কিভাবে হত্যায় যুক্ত হলেন, কার নির্দেশ ও অর্থায়নে কোথা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করলেন, কিভাবে ভাড়াটিয়া খুনি ঠিক করেছেন তা

 এখনো অজানা। কারণ মুছার স্ত্রী পান্না আক্তারের দাবি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ২২ জুন মুছাকে পুলিশের একটি দল আটকের পর আদালতে হাজির করেনি। ফলে আজও মুছা রহস্যজনক নিখোঁজ রয়েছেন।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা মুছা প্রসঙ্গ নতুন করে আলোচনায় এসেছে গত শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে ভোলা জবানবন্দি দেওয়ার পর। ভোলার জবানিতে প্রকাশ পায়, বাবুল আক্তার স্ত্রীকে হত্যার জন্য মুছাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। মিতুকে সরিয়ে না দিলে তাঁকে ক্রসফায়ারে হত্যার ভয়ও দেখিয়েছিলেন। দেওয়া হয়েছিল অস্ত্র কেনার টাকাও।

রহস্যজনকভাবে নিখোঁজের প্রায় পাঁচ বছর পরও মুছাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পিবিআই। মিতু হত্যার নাড়িনক্ষত্র বের করে ফেললেও মুছাকে গ্রেপ্তারে আটকে আছে সংস্থাটি।

বাবুল আক্তারের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুম চৌধুরী বলেন, ‘ভোলা এর আগে মিতু হত্যা মামলা ও অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিল। ওই সময়ের তদন্তকারী কর্মকর্তারা ভোলার কাছ থেকে জবানবন্দি নেননি। প্রায় পাঁচ বছর পর এসে পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা চেষ্টা করছেন ভোলার কাছ থেকে বাবুলকে জড়িয়ে জবানবন্দি নিতে। এটা আমার কাছে রহস্যজনক মনে হচ্ছে।’

রহস্যজনক মনে হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘বাবুল বাদী হয়ে যে মামলা করেছিলেন, সেটি আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবার ওই তদন্ত প্রতিবেদন আদালত গ্রহণ করার আগেই একই হত্যা নিয়ে নতুন আরেকটি মামলা করে বাবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি আগে হাজতে থাকা আসামি ভোলার কাছ থেকে অতীতের তদন্তকারী কর্মকর্তা জবানবন্দি না নিলেও বর্তমান কর্মকর্তা হত্যার পরিকল্পনা ও অস্ত্র সংগ্রহে টাকা দেওয়ার তথ্য সবই বলিয়ে নিয়েছেন। আমরা মনে করি, আসামিকে চাপ দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে এ ধরনের জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তবে আশা করছি, বিচারিক প্রক্রিয়ায় প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।’ তিনি বলেন, ‘মুছাকে টাকা দিয়েছেন, নাকি হুমকি দিয়েছেন সে কথা মুছা তো আদালতে বলেননি। মুছা এখনো নিখোঁজ।’ 

এদিকে মুছা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তাঁর স্ত্রী পান্না আক্তার দাবি করে আসছেন, ‘আগে মুছাকে আদালতে হাজির করা হোক। তাহলেই প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হবে।’ তবে মুছার স্ত্রীর এমন দাবির প্রতি পুলিশের দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। 

ভোলাকে চাপ দিয়ে জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে—বাবুল আক্তারের আইনজীবীর এমন অভিযোগের বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবাবন্দি নেন আদালত। আইনি প্রক্রিয়া মেনেই আদালত জবানবন্দি নিয়েছেন। আর আসামি মিতু হত্যা মামলা সম্পর্কে যা জানে, সেই তথ্যই আদালতে দিয়েছে। তাই আমার মন্তব্য করার কিছু নেই।’ নিখোঁজ মুছা গ্রেপ্তার না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই মুছা পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তার করা গেলে আদালতে সোপর্দ করা হবে।’ 

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে জিইসির মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত ও গুলিতে মিতু নিহত হন। পরে হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া রাশেদ ও নুরুন্নবী পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।

tags

মন্তব্য

মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন

সব খবর