বিতর্কের তালিকায় শেষবেলায় টিভিই ‘অন্ধ’
ব্যাট-বলের লড়াইয়ে ঝাঁজ যেমনই থাক, ব্রিসবেনে এবারের অ্যাশেজে প্রথম টেস্টটা বেশি আলোচনায় এল ক্রিকেটের বাইরের নাটকীয়তায়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে ‘নো–বল’ এবং ‘স্নিকোমিটার’ বিতর্ক এখনো ক্রিকেটপ্রেমীদের আলোচনায় ঝড় তুলছে, এর মধ্যে আজ চতুর্থ দিনে আবার হলো নাটক। এবার বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের কারণে টিভির পর্দাই হয়ে গেল ‘অন্ধ’!
চতুর্থ দিনে আজ ইংল্যান্ডকে ধসিয়ে দিয়ে অ্যাশেজের প্রথম টেস্টটা ৯ উইকেটে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ২ উইকেটে ২২০ রান নিয়ে আজ দিন শুরু করা ইংল্যান্ড বাকি ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে ৭৭ রানের মধ্যেই। তাতে চতুর্থ ইনিংসে জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ২০ রানের। ১ উইকেট হারিয়েই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া।
এ তো গেল ব্যাট-বলের লড়াইয়ের হিসাব, কিন্তু ইংল্যান্ডের ব্যাটিং-ধসের আগেই যে ব্রিসবেনে আজকের নাটকের পর্ব সাড়া! গ্যাবায় কারিগরি ত্রুটিতে এমনই বিদ্যুৎ-বিভ্রাট হলো যে প্রায় ২৫ মিনিট সরাসরি সম্প্রচার বন্ধই ছিল। টেস্ট চলেছে, কিন্তু সেটি আর বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের ঠিকভাবে দেখার সুযোগ হয়নি। বিশ্বজুড়ে সম্প্রচারের যে ফিডটা চালানো হয়, আজ সকালের সেশনের মাঝামাঝি সময়ে বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম জানায়, স্টেডিয়ামে বিদ্যুৎ তো চলেই গেছে, এমনকি এসব সময়ে যে জেনারেটর স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করার কথা ছিল, সেটিও কাজ করেনি। যে কারণে ২৫ মিনিটেরও বেশি সময় টিভির পর্দায় কিছু দেখতে পারেননি দর্শক।
অস্ট্রেলিয়ার চ্যানেল সেভেন, যারা কিনা অস্ট্রেলিয়ারই আরেক চ্যানেল ফক্স স্পোর্টসের সঙ্গে মিলে খেলাটা সম্প্রচার করেছিল, তারা নিজেদের ক্রুদের ক্যামেরা দিয়ে সে সময়ে কিছুক্ষণ খেলা সম্প্রচারের চেষ্টা করেছে। ওই ক্যামেরাগুলো সাধারণত বাউন্ডারির পাশে বসানো থাকে, যেখানে ম্যাচ চলার সময়েই বাউন্ডারির পাশে আসা খেলোয়াড়দের সাক্ষাৎকার নেওয়া যায়। স্থির সেই ক্যামেরা দিয়ে খেলা দেখে মনে হচ্ছিল, ক্রিকেট আরও ৪০-৫০ বছর আগের সম্প্রচারের ধারণায় ফিরে গেছে! ঝামেলা শুধু খেলা দেখা নিয়েই নয়। অস্ট্রেলিয়ার রাজ্যগুলোতে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে জটিল নিয়মকানুনের জেরে ধারাভাষ্যকারেরাও মাঠে গিয়ে ধারাভাষ্য দিতে পারছেন না, স্টুডিওতে বসে টিভিতে দেখেই ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। বিদ্যুত-বিভ্রাটে টিভিই ‘অন্ধ’ হয়ে যাওয়ায় ধারাভাষ্যকারেরাও হয়ে পড়েন ‘বোবা’। তবে রেডিও সম্প্রচার একেবারে বন্ধ হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার এবিসি চ্যানেলের ধারাভাষ্যকারেরা মাঠে গিয়ে ধারাভাষ্য দিয়েছেন, তাই তাঁরা রেডিওতে সরাসরি ধারাবিবরণী দিয়ে যেতে পেরেছেন।
করোনার সময়ে, করোনার স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে এত কড়াকড়ির কারণেও সব ঠিক করতে এত সময় লেগেছে বলে অনুমান অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যমের। সাধারণত সম্প্রচারের সময়ে চ্যানেলগুলোর ১০০ কর্মী কাজ করেন, কিন্তু করোনার স্বাস্থ্যবিধি আর কোয়ারেন্টিন জটিলতার কারণে এবার কাজ করতে পারছেন মাত্র ৩০ জন। তা ছাড়া নিয়মের কড়াকড়ির কারণে তাঁরা মাঠ ও হোটেলের বাইরে কোথাও সেভাবে যেতে পারছেন না, সুরক্ষাবলয় ভেঙে কারও ঢোকার তো উপায়ই নেই। সে কারণে অল্পসংখ্যক কর্মী নিয়েই সব কাজ চলছে! তাতে জটিলতাও বাড়ছে। ব্রিসবেনে এই টেস্টে প্রথম দিন বাদে বাকি তিন দিনেই নাটক হলো। দ্বিতীয় দিনে এক বেন স্টোকসেরই সামনের পায়ে ১৪টি নো-বলের মধ্যে ১২টি আম্পায়াররা তো ধরতেই পারেননি, টিভিতেও ধরা পড়েনি। কেন? কারণ, তৃতীয় আম্পায়ার যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামনের পায়ের নো–বল ধরতে পারেন, সেটিই আনা যায়নি টেস্টে।
নো–বল বিতর্কের পর গতকাল তৃতীয় দিনে বিতর্ক হলো ডিআরএস নিয়ে। ইংল্যান্ডের ডেভিড ম্যালানের আউট নিয়ে নিশ্চিতই ছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু স্নিকোমিটার প্রযুক্তিও এই টেস্টে না থাকায় তৃতীয় আম্পায়ার পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি যে উইকেটের পেছনে যাওয়ার আগে বল আসলেই ম্যালানের ব্যাটে লেগেছে কি না। যে কারণে সে সময়ে ১৮ রানে থাকা ম্যালানকে আউট দেওয়া যায়নি, সেই ম্যালান আজ আউট হয়েছেন ৮২ রানে।
তবে অ্যাশেজের দর্শকদের জন্য আপাতত আশার কথা এই যে কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের সরকারের কঠোর নিয়মনীতির কারণে ব্রিসবেনে প্রথম টেস্টে সম্প্রচারকর্মীরা সংখ্যায় তিন ভাগের এক ভাগ থাকলেও, অ্যাডিলেডে দ্বিতীয় টেস্টে সেটি বাড়তে পারে। সেখানে ডিআরএস পুরোপুরিভাবেই কাজ করবে বলে জানাচ্ছে ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো।