নিরপেক্ষতায় এগিয়ে আমরা...

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৪

আন্দোলনের মাঝেও ধর্ষণ চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর ১০ অক্টোবর,২০২০

সিলেটের এমসি কলেজে গণধর্ষণ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর থেকে দেশজুড়ে চলমান ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন এখনো অব্যাহত আছে। রাজধানী থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব আন্দোলনকারীই ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবি তুলেছেন।

এদিকে চলমান আন্দোলন ও পুলিশি তৎপরতার মাঝেও থেমে নেই ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা। বরং প্রতিদিনই বেরিয়ে আসছে ধর্ষণ নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর ঘটনা। যারা এতদিন ভয়ে মুখ বুজে ছিলেন, তারাও এখন মুখ খুলছেন। অবশ্য এসব ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তৎপর হচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিকভাবেই এটি প্রতিরোধের ডাক আসতে হবে। সচেতন হতে হবে। তাছাড়া কোনোভাবেই এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এ ধরনের অভিযোগ এলে দোষীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনাই কাজ।

গত ৪ অক্টোবর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হলে সারা দেশের মানুষ ধিক্কার, নিন্দা জানিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবি ওঠে। এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি আইন প্রস্তাব আকারে আগামী জাতীয় সংসদে উঠবে বলেও জানান আইনমন্ত্রী।

দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী সামাজিক আন্দোলন চলমান। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও যখন বেশ তৎপর অথচ এর মধ্যেও থেমে নেই ধর্ষণ, গণধর্ষণ কিংবা নারী নির্যাতনের ঘটনা।

কয়েকদিন আগে সাভার ও আশুলিয়ায় বেশ কয়েকটি গণধর্ষণ ও ধর্ষণের ঘটনা গণমাধ্যমে আসে। ৮/১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য এক কিশোরীকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে। তারা সেই ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। পরে তার বাবা থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ কিশোরগ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্যকে আটক করে। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে মিরপুরের আরেক নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে।

এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এমদাদ হোসেন বলেন, গ্রেপ্তারদের প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ওই নারীকে গণধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।

রাজধানীর খিলগাঁওয়ে এক রিকশাচালকের বিরুদ্ধে চার শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যায় গত বৃহস্পতিবার। ওই চার শিশুর বয়স আনুমানিক ছয় থেকে নয় বছর। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি আছে। অভিযুক্ত রিকশাচালক সজল মোল্লাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মাদারীপুরের কালকিনিতে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক দরিদ্র কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে বিশ্বজিৎ বৈদ্য নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬ বছরের এক শিশু। গভীর রাতে মায়ের পাশ থেকে তুলে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে একই গ্রামের জসীম উদ্দিনের ছেলে হেলাল উদ্দিন (২০)। গত বুধবার দিবাগত রাতে উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চর নোমানে এ ঘটনা ঘটে।

এছাড়া ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় পুত্রবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় কাদের মাঝি (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত বুধবার মামলা দায়েরের পর গভীর রাতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চাঁদপুরে টানা ১৩ দিন আটকে রেখে এক কিশোরীকে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণের অভিযোগে ওই কিশোরীর আপন খালু কামরুল ইসলামকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ৮ অক্টোবর তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা উত্তর ইউনিয়নের রুস্তমপুর গ্রামে এ ‘ধর্ষণের’ ঘটনা ঘটে।

যশোরে বাসের মধ্যে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যশোর শহরের মনিহার এলাকার কোল্ডস্টোরের কাছে এ ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের শিকার নারীর বাড়ি মাগুরার শালিখা এলাকায়। এ ঘটনায় এম কে পরিবহনের ওই বাসটির কন্ডাক্টর মনিরুল ইসলামকে (২৭) আটক করেছে পুলিশ।

ফেনীর সোনাগাজীতে সপ্তম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে (১২) ধর্ষণের অভিযোগে তমিজ উদ্দিন নয়ন (৫০) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নয়ন ওই ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি সম্পর্কে নির্যাতিত ছাত্রীর চাচা হন।

নেত্রকোনা থেকে হাটহাজারী আসার পথে চলন্ত বাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায় বাসের সুপারভাইজার এবং কর্মচারীরা। এ ঘটনায় বাস হেলপারকে গণধোলাই দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

এভাবেই প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও থেকে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ আর নির্যাতনের খবর আসছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নেত্রী শাকিলা ইসলাম বলেন, নারীরা একদিন চাপের মুখে সহ্য করেছিল। বর্তমান সময়ে তীব্র আন্দোলনের কারণে অনেকেই তা প্রকাশ করছে।

তিনি বলেন, সামাজিক সচেতনতা, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ধর্ষণের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সামাজিক আন্দোলন করে জনসচেতনতা গড়ে তুললে এটি কমানো সম্ভব হবে। সর্বোপরি আইনের শাসনই হচ্ছে মুখ্য বিষয়। ধর্ষণকারী যেন কোনোভাবেই সাপোর্ট না পায় এ ব্যবস্থা নিশ্চিত করলেই ধর্ষণের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

মানবাধিকার সংগঠন রয়্যাল ফাউন্ডেশনের পরিচালক সাবরিনা আক্তার রিতা বলেন, ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি, শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউই এখন নিরাপদ নয়। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ধর্ষণে জড়িয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষিত মানুষ এই ব্যাধিতে বেশি জড়িত। এটা প্রতিরোধ করতে সরকারকে শক্ত আইন প্রয়োগ করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভূমিকা পালন করতে হবে। মেয়েদের সচেতন হতে হবে, চোখ-কান খোলা রেখে চলতে হবে, ওয়েস্টার্ন মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। আর সর্বোপরি পুরুষদের নারীর প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। তাহলে ধর্ষণ থেকে আমাদের সমাজ ও দেশ রক্ষা পেতে পারে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, থানায় এ ধরনের অভিযোগ আসা মাত্রই পুলিশ এ বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকে। ধারাবাহিক সব ঘটনায় পুলিশ দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনেছে।

ধর্ষণ বন্ধে সামাজিক সচেতনতাই জরুরি। নিজের বিবেক বুদ্ধি জাগ্রত করে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

tags

মন্তব্য

মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন

সব খবর